সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘গ্রিন ফিন্যান্স’ নামে প্রচলিত পরিবেশবান্ধব ব্যবসা উদ্যোগে পর্যাপ্ত তহবিল থাকলেও যোগ্য উদ্যোক্তা পাচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।
পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক অবকাঠামোর জন্য দেওয়া ঋণকে সবুজ অর্থায়ন বোঝানো হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে শুরু করে সূর্যের আলোর ব্যবহার বাড়ানো, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা এবং কাগজের তুলনামূলক কম ব্যবহারসহ বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তিতে স্থাপিত অবকাঠামোকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে ধরা হয়। পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির ধারণা থেকে ২০১১ সালে সবুজ ব্যাংকিং নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবুজ অর্থায়নের গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এ জন্য সবুজ অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আইলা কিংবা ঘূর্ণিঝড় হিসেবে প্রতিবছরই আমাদের কাছে আসছে। আমরা অনেক খরচ করি। খরচটা পরিবেশবান্ধব হওয়া দরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোষ্ঠীভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের এই চেয়ারম্যান। পরিবেশদূষণ রোধ, কারখানা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার জন্যই এ ধরনের কারখানা স্থাপনকে বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। গ্রিন ফ্যাক্টরি হলে একদিকে যেমন পরিচালন ব্যয় কমে যায়, তেমনি বিদেশি ক্রেতারা আকৃষ্ট হন বেশি। ফলে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যায়। সোনালী ব্যাংক পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে ঋণঝুঁঁকি ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করছে। নতুন ঋণ মঞ্জুরি ও নবায়নের সময় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রকল্পের ঋণঝুঁকি নিরূপণের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি নিরূপণ করা হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান মনে করেন, দেশে গ্রিন ফিন্যান্স এখন সীমিত পর্যায়ে আছে। কারণ এখানে মুনাফা কম, তাই উদ্যোক্তারাও আসছেন না।
তিনি বলেন, আমরা ফান্ড নিয়ে বসে আছি। উদ্যোক্তা আসছেন না। যদি উদ্যোক্তা আসেন, কনসেপ্টটা যেহেতু কাজ করছে, এটার পরিধি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু ইনসেনটিভও আছে। গ্রিন ফিন্যান্স করতে ফান্ড আছে। তাই উদ্যোক্তাদের আসতে হবে।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, গ্রিন ব্যাংকিংয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও রাতারাতি গ্রিন উদ্যোগ করা যাবে না।
জানা গেছে, সবুজ শিল্পায়ন খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে পরিবেশবান্ধব পণ্য ও সেবা উদ্ভাবন, উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংক কর্তৃক অর্থায়নকৃত ও অর্থায়নযোগ্য প্রকল্পে পরিবেশগত দিক থেকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পণ্য উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমানে সোনালী ব্যাংক পেপারলেস ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করছে বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তিনি বলেন, যদি পেপার না থাকে, তবে আলটিমেটলি বাঁশ লাগবে না, কাঠ লাগবে না। পরিবেশ সাশ্রয় হবে। এটাই গ্রিন ফিন্যান্স। আমরা আলো সাশ্রয় করে যাতে কাজ করতে পারি, সোলারে কাজ করতে পারি, সে জন্য সোলারে ইনভেস্ট করছি।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে রিডিউস, রিফিউজ ও রিসাইকল চর্চার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বা সাশ্রয়ী ব্যাংকিং নিশ্চিতকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকার, গ্রাহক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং পরিবেশ রক্ষার কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য প্রেষণা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গ্রিন ব্যাংকিং বিষয়ে ব্যাংকের স্টাফ কলেজ ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রশিক্ষণ/কর্মশালা চলছে।